অর্থের বিনিময়ে অন্যের হয়ে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে সেটিকে ক্রসফায়ার বলে চালিয়ে দেয়া ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড,ঘুষ চাঁদা আদায় এমনকি ডাকাতি করার মতো অভিযোগ রয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান বা (র্যাব) এর বিরুদ্ধে।
2014 সালে নারায়ণগঞ্জের সাত জনকে হত্যা করে নদীতে ডুবিয়ে দেয়া এবং টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর কে সরাসরি গুলি করে হত্যার মতো ভয়াবহ অভিযোগ রয়েছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে।
তবে র্যাব কুখ্যাত সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ আর বিভিন্ন অপরাধীদের আতঙ্কের নাম,শুরুর দিকে অনেক কুখ্যাত সন্ত্রাসী র্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ায় রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই বাহিনী জঙ্গিবাদ,মাদক,অবৈধ অস্ত্র ও মানবপাচার নির্মূলে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে র্যাব।এছাড়া সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত করতে ও র্যাবের দীর্ঘ প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।
সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে রেব বাহিনী সংস্কার বা বিলুপ্তি নিয়ে তবে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত না করা হলেও বদলে যেতে পারে র্যাবের পোশাক এবং লোগো।
2001 সালের নির্বাচনে জিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে।সে সময় ঢাকার রাস্তায় একের পর এক হত্যা কান্ড চলছিল এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে 2003 সালে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে অপারেশন ক্লিনহার্ট চালু করা হয়।পরে 2004 সালে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে গেলে যাত্রা শুরু করে রেপিড একশন ব্যাটালিয়ন।
র্যাবের কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই দেশে অপরাধ এবং চাঁদাবাজির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় যা জনগণের মাঝে র্যাবের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে তুলে সন্ত্রাস দমনে এমন সফলতায় স্বস্তি ফিরে আসে জনমনে র্যাবের প্রথম ক্রসফায়ার শুরু হয় কুখ্যাত সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান কে দিয়ে।
সেই সময় কিছু ক্রসফায়ার এরপর বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণ এর ঘটনা ও ঘটেছিল ৬টি ব্যাটালিয়ন নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে পুরো দেশে র্যবের রয়েছে 15 টি ব্যাটালিয়ান ,তবে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সমালোচনা শুরু হয় র্যাবের বিরুদ্ধে।
পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা অনেক আগে থেকেই ছিল কিন্তু র্যাবের ক্ষেত্রে ক্রসফায়ার যেন একটি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়।মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্যমতে র্যাপ গঠনের পর থেকে 2006 সালে বিএনপি ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত শুধু ক্রসফায়ার ৩৮০ জনের প্রাণহানি ঘটে।
যা সেই সময়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ওয়াশিংটনে পাঠানো এক তারবার্তায় উল্লেখ ছিল র্যাবের সবচেয়ে পরিচিত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানো।
এছাড়াও ঘুষ চাঁদাবাজি এবং জমি দখলের মতো নানা অভিযোগ ওঠে ২৩ আগস্ট 200৫ সালের এক মার্কিন বার্তায় বলা হয়েছিল কিছু র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে ঘুষ চাঁদা আদায় এমনকি ডাকাতির অভিযোগ উঠেছে সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন সময়ে র্যাবের হাতে ক্রসফায়ারে নিহতের খবর নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে।
গুরুতর অভিযোগ উঠতে থাকে অর্থের বিনিময়ে অন্যের হয়ে হত্যা করে সেই ঘটনাকে ক্রসফায়ার বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে।এ ধরনের একটি আলোচিত ঘটনার সামনে আসে 2014 সালে নারায়ণগঞ্জের সাত জনকে হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়ার অভিযোগ ওঠে।
তাদের মরদেহ নদীতে ভেসে ওঠার পর এ ভয়াবহ ঘটনা প্রকাশ্যে আসে নিহতদের একজন পৌর কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের পরিবার অভিযোগ করে।
র্যাব তাকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে এক সংবাদ সম্মেলনে নজরুলের শশুর শহিদুল ইসলাম দাবি করেন র্যাব কর্মকর্তাদের বিপুল পরিমাণ ঘুষ দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জড়িত এক সিনিয়র কর্মকর্তা সহ 15 জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় হাইকোর্ট মামলাটি এখনো আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
র্যাব নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয় 2018 সালে টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হকের নিহত হওয়ার অডিও প্রকাশের পর অডিওতে একরামুলের ওপর গুলি চালানোর মুহূর্তে তার পরিবারের ফোন কলের রেকর্ড শোনা যায়।
র্যাবের বিরুদ্ধে আরেকটি গুরতর অভিযোগ হলো সরকারের হয়ে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের তুলে নেওয়া।বিশেষত 2014 2018 সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ধরনের অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে আসে 2021 সালে যুক্তরাষ্ট্র আকস্মিকভাবে র্যাব এবং এর 16 কর্মকর্তার ওপর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে বলা হয় বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠন গুলো অভিযোগ করেছে যে 2009 সাল থেকে র্যাব এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় 600 টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং 600 বেশি ঘুমের জন্য দায়ী যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞার পর থেকে র্যাবের হাতে ক্রসফায়ারে নিহতের ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে।
সম্প্রতিক গুম তদন্ত কমিশন জানিয়েছে 2009 থেকে 2024 সাল পর্যন্ত 1600 টি গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে এদের মধ্যে ৪০০টি অভিযোগ খতিয়ে দেখে 172 টি ঘটনায় র্যাবের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে গবেষণায় উঠে এসেছে 2019 থেকে 20021 সালে গুমের ঘটনা সবচেয়ে বেশি।
বর্তমানে র্যাবের পুর্ণগঠন নিয়ে বিতর্ক চলছে বিশেষঙ্গদের মতে বাহিনীটি বিলুপ্ত না করে সংস্কারের মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন পুলিশ বাহিনীর উনিফর্ম লোগো পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিবর্তন হতে পারে র্যাবের ইউনিফর্ম ও র্যাব এর পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ইতিবাচক পদক্ষেপ এর পাশাপাশি মানবিক কার্যক্রমের উদাহরণ রয়েছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবি করেন কয়েকটি ঘটনা দিয়ে র্যাবের পুরো কাজ বিচার করা উচিত নয়।
রাজনীতিবিদরা ব্যক্তিগত স্বার্থে বাহিনীর সদস্যদের বিচ্ছিন্ন ভাবে ব্যবহার করতে পারে তবে তার সার্বিক ব্যাপার নয় কিছু বিতর্ক থাকলেও র্যাবের সফলতা ও কম নয়।র্যাব জঙ্গিবাদ,মাদক,অবৈধ অস্ত্র ও মানবপাচার নির্মূল এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার মতো সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
সুন্দরবনের জলদস্যু মুক্ত করতে র্যাবের দীর্ঘ প্রচেষ্টা সফল হয়েছে র্যাবের বিভিন্ন অভিযানে এ পর্যন্ত মোট 328 জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা দিয়েছে র্যাব।
মাদক নির্মূলে ও র্যাবের অভিযান প্রশংসনীয় তারা বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে এবং শত শত মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে মানব পাচার প্রতিরোধে হোক রেপ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে র্যাবের অভিযানে বেশ কিছু পাচারকারী চক্র ধরা পড়েছে এবং শতাধিক পাচার হওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে এছাড়া কিশোরগঞ্জ নির্মূলের র্যাব বিশেষ মনোযোগী এবং একাধিক অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে।