2020 সালের সেপ্টেম্বরে ইসরাইলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে বহুল আলোচিত আব্রাহাম অ্যাকর্ড বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প|
সে সময় ইসরাইলের সমগ্র ইতিহাসে এটিকে এক বিশাল মাইলফলক বলে আখ্যা দেন তিনি ওই চুক্তির আওতায় শুরুতে সংযুক্ত আরব আমিরাত বাহারাইন এবং পরবর্তী সময়ে সুদান ও মরক্কো ইসরাইলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় দ্রুত সৌদিআরব কে ও ওই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ চলতে থাকে।
এদিকে আব্রাহাম অ্যাকর্ডের ফলে ধামাচাপা পড়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এতে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ফিলিস্তিনিরা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার বদলে নতুন করে অশান্তির আগুন ছড়িয়ে দেয় আব্রাহাম।
স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি উপেক্ষিত হওয়ার ক্ষোভের জেরে 2023 সালের 7 অক্টোবর ইজরায়েলের স্মরণকালের ভয়াবহ হামলা চালায় হামাস।
সেই হামলায় অন্তত ১২০০ জনের প্রাণহানি হয় এছাড়া আড়াইশো জন কে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
এর জেরে শুরু হওয়া যুদ্ধে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় 44 হাজার মানুষ নিহত হয়েছে আহত লক্ষাধিক কেবল গাজা নয় এই যুদ্ধ এখন ছড়িয়ে পড়েছে লেবানন থেকে শুরু করে ইয়েমেন ও ইরান পর্যন্ত পুরো মধ্যপ্রাচ্যে দাঁড়িয়ে আছে এক সর্বাত্মক যুদ্ধের কিনারে।
এই ভয়াবহতা এরাতে গাজা যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ধারাবাহিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মিসর ও কাতার কিন্তু যুদ্ধের এক বছর পেরিয়ে গেলেও সাফল্যের মুখ দেখেনি তারা।
এরই মাঝে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাম্প এ যাত্রায় গাজা যুদ্ধ নিয়ে কি হবে তার অবস্থান যুদ্ধ বন্ধের নেতানিয়াহুকে কি যথাযথ চাপ দেবেন তিনি নাকি তার বদলে আরো বল্গাহীন হয়ে উঠবে নেতানিয়াহুর নারকীয় তান্ডব।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোকে আব্রাহাম অ্যাক্টের আওতায় এনে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি কে পাঠিয়েদিবেন ইতিহাসের হিমঘরে এসব প্রশ্নের উত্তর ঘিরে চলছে নানা জল্পনা।
এরই মাঝে ট্রাম্পের বিজায় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল ঘনিষ্ঠতা আরও গভীরতম হবে বলে উচ্ছাস জানিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নির্বাচনে জয়ের পর এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের সাথে ৩ বার ফোনে কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নেতানিয়াহু বলেন হামাস লেবাননের হিজবুল্লাহ ইয়েমেনে হুথি ও ইরানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হওয়ার ব্যাপারে একমত ট্রাম্প আগামীতে ইসরাইলের জন্য সুদিন আসছে বলেও জানান নেতানিয়াহু এর আগের শাসনামলে ট্রাক নিজেকে ইসরাইলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে দাবি করেন সে সময় তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করেন তিনি জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেন ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে।
শুধু তাই নয় সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করে নেয়া বিতর্কিত গলান হেইটস কেউ ইসরাইলের ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দান ট্রাম্প।
সার্বিক প্রেক্ষাপটে এ যাত্রায় ড্রাম আব্রাহাম অ্যাকর্ড কে আরো কার্যকর ও বিস্তৃত করার পথে হাঁটবেন বলে অভিমত অনেক আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের আব্রাহাম অ্যাকর্ডের বুনিয়াদ আরো শক্ত করতে এবারে সৌদি আরব কে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চালাবেন তিনি।
এছাড়া ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়া সহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর সাথে চুক্তিতে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন তবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে না বলে জানাচ্ছে সৌদি আরব।
এদিকে এরই মাঝে চলতি সপ্তাহে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আরব ইসলামিক সম্মেলনে গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন 57 টি মুসলিম দেশের নেতা এইসব ব্যালটে প্রথমবারের মতো সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গাজা যুদ্ধকে ইজরাইলি গণহত্যা বলে অভিযুক্ত করেন।
সম্মেলনে মুসলিম বিশ্বের নেতারা অবিলম্বে ফিলিস্তিনের দখল করা ভূখন্ড থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানান একই সাথে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সুস্পষ্ট সময় রূপরেখা প্রণয়নে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
অন্যদিকে সম্মেলনের নেতানিয়াহু সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে আরব লীগের সেক্রেটারি বলেন ইজরাইল জাতিসংঘের সদস্য পদ হারানোর ঝুঁকিতে আছে অন্যান্য দেশের সমর্থন হারাচ্ছে তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন সার্বিক বাস্তবতায় আগামীতে ট্রাম্প যদি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে নজর দিতে পারেন তাহলে মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যেতে পারে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিতে হতে পারে ওই অঞ্চলে।
একই সাথে আগের আমলের ট্রাম্প নতুন কোন যুদ্ধে জড়াননি বলে যে গর্বিত প্রচারণা চালান তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে ওই অবস্থান|